Welcome to OUSPER

Tuesday, September 6, 2011

সুদৃশ্য ড্রাগন ফল

ফণীমনসার সঙ্গে নানাভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ ড্রাগন ফলের গাছ। নাম থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এটি আমাদের দেশি ফল নয়। তবে সুস্বাদু এই ফলটি এখন আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। শুরুটা মাত্র কয়েক বছর আগে। ইদানীং বৃক্ষমেলায়ও দু-একটি গাছ দেখা যাচ্ছে।
এ বছর বর্ষায় ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গিয়ে সেখানকার বাগানে এই ফলের পর্যাপ্ত ফলন দেখে মন ভরে গেল। বৃষ্টিস্নাত দিনগুলো ড্রাগন ফলের প্রকৃত সময়। দু-এক বছর আগে ফলহীন এই গাছগুলো দেখে মনেই হয়নি, এমন গাছে এত চমৎ কার ফল হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, বাইরের খোলস দেখেও মনে হবে না যে ফলের ভেতরটা এত সুদর্শন ও সুস্বাদু। পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ড্রাগন ফলের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বাগানও। আমাদের দেশে ফলটি একেবারে নতুন হলেও ক্রমেই মানুষ এর স্বাদের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।
জার্মপ্লাজম সেন্টারের ড্রাগন ফলের বাগানটি এখন ফুল-ফলে সুশোভিত। রংবেরঙের ফল ঝুলে আছে গাছে গাছে। কোনো কোনো গাছে উঁকি দিচ্ছে ফুলের কলি। ফলটি চাষের ক্ষেত্রে সেখানে আমাদের নিজস্ব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। ফালি করে কাটা বাঁশ ও সিমেন্টের খুঁটির মাথায় বসানো হয়েছে পরিত্যক্ত টায়ার। তার ওপর তুলে দেওয়া হয়েছে লতা। লতাগুলো দিব্যি ঝুলে পড়েছে চারপাশে। সেখানকার ঊর্ধ্বতন সহযোগী গবেষক ড. সামছুল আলম জানিয়েছেন, বর্তমানে বাগানে তিনটি প্রকারভেদ মিলিয়ে গাছের সংখ্যা শতাধিক। ক্যাকটাস গোত্রীয় হওয়ায় গাছটি প্রথম দেখায় চেনা মনে হলেও ফল দেখে অচেনাই মনে হবে। ড্রাগন ফ্রুট মূলত (Hylocereus undatus) রেড পিটায়া, স্ট্রবেরি পিয়ার, কনডেরেলা প্ল্যান্ট ইত্যাদি নামেও পরিচিত। ১৮৩৬ সালে সর্বপ্রথম জনৈক বিংহাম হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে এর চাষ শুরু করেন। তারপর ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্যান্য উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। জন্মস্থান মধ্য আমেরিকা, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়। প্রতি হেক্টরে গড়পড়তা উৎ পাদন ২০ থেকে ২৫ টন। বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৬০০ থেকে এক হাজার ৩০০ মিমি; তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ভালো ফলন হয়। জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। এরা নিশিপুষ্পা, রাতে বাদুড় ও নিশি-প্রজাপতি (মথ) পরাগায়ণ ঘটায়। সাধারণত কাটিং কিংবা বীজের সাহায্যেই চাষ।
গাছ বহুবর্ষজীবী। লতানো, মাংসল ও খাঁজালো। লোহা, কাঠ বা সিমেন্টের খুঁটি বেয়ে দিব্যি বেড়ে উঠতে পারে। ফুল ফোটে গ্রীষ্মে, রং সাদা। থাকে এক রাত। পাকা ফল না ধুয়ে পাঁচ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে ভালো রাখা যায়। সচরাচর চার রঙের ফল দেখা যায় বাজারে—লাল বাকল, লাল শাঁস; হলুদ বাকল, সাদা শাঁস; লাল বাকল, সাদা শাঁস; লাল বাকল, নীলচে লাল শাঁস। রঙের ভিন্নতা অনুযায়ী স্বাদের ক্ষেত্রেও তারতম্য লক্ষ করা যায়। শাঁসের ভেতর ছোট ছোট অজস্র কালো রঙের বীজ থাকে।
ফলের খোসা খুব পাতলা। ফলে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, খনিজ লবণ ও আঁশ থাকে। বহুমূত্র, রক্তচাপ ও শরীরের স্থূলত্ব কমায়। লাল রঙের ফল থেকে চমৎ কার প্রাকৃতিক রং পাওয়া যায়। এই রং শরবত তৈরিতেও ব্যবহার্য। শুকনো ফলও ভক্ষ্য এবং তা কাঁচা ফলের মতোই উপকারী।

No comments:

Post a Comment